গাজীপুরের কাশিমপুরে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগে কাজ করছে ঠিকাদার পরিচয়ের আড়ালে একটি চক্র। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তিতাস গ্যাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত। কাশিমপুরের কাজী মার্কেট, সুলতান মার্কেট, ভূইয়াপাড়া, স্কয়ার গেট, হাজী মার্কেট, পশ্চিম-শৈলডুবি, সুরাবাড়ী,বাগবাড়ী এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও রাতের আঁধারে টাকার বিনিময়ে আবার গ্যাস চলে আসে সেই চুলায়। এরপর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আবার অভিযান চালিয়ে গ্যাসের রাইজার খুলে নিয়ে গেলে সেই চক্র সেখানে নিম্নমানের রাইজার লাগিয়ে মালিকদের কাছ থেকে টাকা ওঠায়। অনেকে আবার আবাসিক হিসেবে গ্যাসের সংযোগ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাসের ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগও উঠে এসেছে।
অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে অনেকে জানলেও ওই চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কাশিমপুরের কাজী মার্কেট এলাকায় আলহাজ্ব মুহাম্মদ কাজী কলোনীর রাজকন্যা ভিলায় মোহাম্মদ কাজীর ছেলে মাহমুদুল কাজীর তার ভাড়াটিয়া বাসায় ৩০০ শত চুলার মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছেন।অপরদিকে সারদাগঞ্জ কাজী মার্কেট ডিবিএল গেট সংলগ্ন হাকিম মাতাব্বর স্কুল এলাকায় মৃত হাকিম উদ্দিন মাতব্বরের ছেলে রমিজ উদ্দিন মাতাব্বর, আফতাব উদ্দিন মাতব্বর, সফিজ উদ্দিন মাতাব্বর ও জসীম উদ্দিন মাতাব্বর এবং তমিজ উদ্দিন মাতব্বরের মেয়ের জামাই জিয়াউর রহমানের বসতবাড়ী ও ভাড়াটিয়া বাসায় প্রায় পাঁচ শতাধিকের উপরে দিমুখী চুলার মাধ্যমে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এটা জেনেও আশুলিয়া তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
এছাড়াও কাশিমপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনে অভিযান পরিচালনা করলেও রাতেই আবার সেখানে পুনরায় সংযোগ দেয় একটি চক্র। একটি ভবনের বাসিন্দা জানান, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। কিন্তু সকালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও রাতের আঁধারে পুনরায় দেওয়া হয় সংযোগ।
কাশিমপুরের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরকম আরও অনেক ভবন আছে। সবাই জানলেও এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না। তাদের ভাষ্য, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সংযোগ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বিল বই চেক করে থাকে। এসময় অতিরিক্ত চুলা পেলেই প্রতি চুলার জন্য এক বছরের জরিমানা করে সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে থাকে।
কাশিমপুরের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের দাবি, গত এক বছরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে যতগুলো রাইজার কেটে নিয়েছে তার বেশিরভাগই পুনরায় অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাসা বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানও রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। তিতাস কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে একবার অভিযান পরিচালনা করলেও পরের দিন আবার পুনরায় সংযোগ হয়ে যায়। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো সুফল আসে না। যেই লাউ সেই কদু। একটি অভিযান পরিচালনায় পুলিশ পাহারা লাগে, লেবারদের জন্য আলাদা বাজেট করতে হয়। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন প্রতিনিধি তাদের আপ্যায়ন ও যাতায়াত থেকে শুরু করে সমস্ত খরচ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হয়। এদিকে কিছু গ্রাহককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও তার পরিমাণ খুবই কম হওয়ায় অন্যরা অবৈধ সংযোগ নিতে সাহস দেখায়। অবৈধ সংযোগের সঙ্গে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশের কথা অনেকে বললেও প্রতিষ্ঠানটি আশুলিয়া ও কাশিমপুর অঞ্চলে নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন,“সংযোগ বিচ্ছিন্নকালে দুই কিলোমিটার পাইপ তুলতে গিয়ে দেখতে পাই নিম্নমানের ২ ইঞ্চি অথবা ১ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে সংযোগ নিয়েছে। এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।”এক দশকের বেশি সময় ধরেই দেশে নতুন আবাসিক সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। নতুন ভবনের মালিকদের এখন সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসই ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই সময়েও টাকার বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ আছে আনোয়ার হোসেন নামের একজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
তবে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি হজ্ব করে এসে আর কোন অনৈতিক কাজ করি না। পূর্বে যা করেছি এখন থেকে আর হারাম খাবো না। তিনি আরো বলেন আশুলিয়া তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম স্যারের কাছেও আমার বিষয়ে অনেক অভিযোগ গিয়েছে। আমি পূর্বে গ্যাসের লাইন দিলেও এখন আর লাইন দেই না, আমি কামলা দিয়ে খাই।
এবিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আশুলিয়া জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ খাদেমুদ্দীন বলেন, কেউ যদি দিনে বা রাতের আঁধারে যদি কেউ পুনরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয় তা দেখবে প্রশাসন আমাদের কাজ নয় তাদের খোঁজ নেওয়া।একটি উচ্ছেদ অভিযানে কত টাকা ব্যয় হয় এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আপনার জানার বিষয় নয় এটা ম্যানেজমেন্টের বিষয়। কাশিমপুরে কতগুলো বৈধ গ্রাহক এবং কতগুলো অবৈধ গ্রাহক আছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাশিমপুরের আবাসিক সংযোগ গুলো সবগুলোই অবৈধ! আবাসিকে আমাদের কোন বৈধ গ্রাহক নেই।