• শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা তিন ক্যাটাগরিতে, রয়েছে অসন্তোষও

দৈনিক শিক্ষাপ্রতিদিন,প্রতিবেদক / ১৩ দেখায় সময়:
সর্বশেষ: সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে তাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের ‘এ’, মাঝারি আহতদের ‘বি’ ও কম ঝুঁকিপূর্ণদের ‘সি’ ভাগে ভাগ করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান। তবে এসব ক্যাটাগরি তৈরির প্রক্রিয়া ও সমতা নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে আহতদের মধ্যে।

জুলাই আন্দোলনের আহত সৌরভ ইসলামের ভাষ্য, ‘এ ক্যাটাগরি নিয়ে একটা ঘোলাটে ভাব আছে। আমরা এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। একটা কথিত প্রতিনিধি দল ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে কথা বলে ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরি ঠিক করেছে। তবে ‘সি’ ঠিক করা হয়নি। কিন্তু যারা ‘সি’ তারা এখন আন্দোলনে নামছেন। সমতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন আসলে তাঁর প্রতিবাদ জানাব।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনের আহতদের জুলাই ইউনিট পরিদর্শনকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর থেকে আসা সৌরভ ইসলামসহ কয়েকজন একসঙ্গে বসে আছেন। পাশের বিভিন্ন শয্যায় অনেকে চিকিৎসাধীন। অনেকের পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রিং বসানো। তাদের অভিযোগ, শয্যা সঙ্কটে মেঝেতে থাকছেন আহত অনেকে।

এ সময় সৌরভ বলেন, ‘আমি আহত হয়েছিলাম মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে। ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হই এবং সেদিনই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রায় চার মাস ধরে পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) অবস্থান করছি।’

চিকিৎসাধীন আহতদের অভিযোগ, জুলাই ফাউন্ডেশন তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো সহায়তা করে না। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি জুলাই শহীদ ও আহতদের অনুদান দিয়ে থাকে। চিকিৎসার জন্য ১০টি হাসপাতাল তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে জুলাই আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসা দেওয়া যায়। তবে তাদের যখন এমআরআই বা সিটিস্ক্যান করতে হয়, তখন নিজেদের টাকা দিয়েই করতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি বলা চলে না।

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘ। বিশেষ করে আমাদের অনেকের পায়ে রিং বসানো আছে। এ কারণে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হচ্ছে। পায়ে রিং থাকার কারণে অনেক সময় ৮ থেকে ৯ মাসও লাগতে পারে। আমার থেরাপি এবং ওষুধ চলছে।’

‘যাদের চিকিৎসা হবে না বা যাদের হাড় অকেজো হয়ে গেছে, তাদের বারান্দায় ফেলে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছে, দেখছি। কিন্তু নানা বাহানা দিচ্ছেন তারা।’, যোগ করেন তনি।

চিকিৎসাধীন আহতদের অভিযোগ, জুলাই ফাউন্ডেশন তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো সহায়তা করে না। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি জুলাই শহীদ ও আহতদের অনুদান দিয়ে থাকে। চিকিৎসার জন্য ১০টি হাসপাতাল তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে জুলাই আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসা দেওয়া যায়। তবে তাদের যখন এমআরআই বা সিটিস্ক্যান করতে হয়, তখন নিজেদের টাকা দিয়েই করতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি বলা চলে না।

পুরো সিস্টেমে গলদ রয়েছে অভিযোগ করে তারা বলছেন, এ পর্যন্ত কোনো গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এ কারণে তারা সম্মান পাচ্ছেন না। যাদের অবস্থা বেশি ক্রিটিক্যাল, তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তারা প্রশাসনের অবহেলা দেখছেন। অনেক সময় ভালোভাবে ফিজিওথেরাপি করা হয় না, প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হয় না। সঙ্গে রয়েছে সিন্ডিকেট। এসব কারণে ভালো সেবা পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

সৌরভ বলেন, ‘আমাদের দেখতে সুস্থ মনে হলেও আসলে তা না। অনেকের শরীরে গুলিবিদ্ধ অথবা ভেতরে রিং বসানো আছে। তাই আমাদের চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় নিচ্ছে।’

আহতদের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে কোনো ফ্যাসিস্ট ব্লকের লোক নেই বলে আমি মনে করি। যদি থাকে, চিকিৎসা পাওয়াটা তাদের অধিকার। কিন্তু যদি তারা পৈশাচিক আচরণ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সৌরভ আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেক অভ্যন্তরীণ গ্রুপ রয়েছে। কিন্তু দিনশেষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র আহতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে ফায়দা নিতে চেষ্টা করছে বলে আমার মনে হয়।’

হাসপাতালে জুলাই ইউনিটকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান। তিনি বলেন, ‘তারা জুলাই আন্দোলনে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গণঅভ্যুথানের পর থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ৮৮৯ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। জুলাই আন্দোলনে আহত ৯৯ জন রোগী ভর্তি আছেন।’

শয্যা সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে মোট শয্যা এক হাজার হলেও বর্তমানে ভর্তি আছেন এক হাজার ৩১ জন রোগী। এর ফলে অনেক সময় রোগীরা প্রয়োজনীয় শয্যা পাচ্ছেন না।’

ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমাদের হাসপাতাল শুরু থেকেই নিহত ও আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে জুলাই আন্দোলনের আহতদের জন্য বিশেষ কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে এসে আহত রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আহতদের অনেকে গুরুতর বা ক্রিটিকাল ইনজুরিতে আক্রান্ত, যাদের দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরও সংবাদ