• সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

ববি উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

দৈনিক শিক্ষাপ্রতিদিন,প্রতিবেদক / ৪ দেখায় সময়:
সর্বশেষ: শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় উপাচার্য বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবি জানালে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সভাটি স্থগিত করে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

শিক্ষার্থীরা দুপুর থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে। তারা অভিযোগ তোলেন যে, উপাচার্য সিন্ডিকেট থেকে দুই শিক্ষক প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের পুনর্বাসন করছেন এবং একটি সাজানো সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা নানা স্লোগান দেয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তারা ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, ‘শুক্রবার বিকেলে যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে, তাতে কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নেই এবং এটি গোপনীয়তার সঙ্গে ডাকা হয়েছে স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যে। আমরা এই সিন্ডিকেট সভা মানি না।’
সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য প্রক্টর কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান, তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সরাসরি উপাচার্যের সঙ্গে বাসভবনেই কথা বলতে চান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমরা ২২ দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পাতানো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আওয়ামীপন্থীদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে, যা আমরা মানি না। আমরা অযোগ্য প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।’

বিক্ষোভের পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও জানান এবং সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রসায়ন বিভাগের রফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের শহিদুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের নাসিম বিল্লাহ, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, মাইদুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ আশরাফুল মোল্লা, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, আবদুল করিম ও মিরাজুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি-
১. রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ। ২. অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের প্রতিনিধি দিয়ে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান। ৩. বাতিল হওয়া দুই শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে পুনর্বহাল। ৪. ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা। ৫. সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার বিধান চালু। ৬. সিন্ডিকেটের আলোচ্য বিষয় সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করা। ৭. অবকাঠামো উন্নয়নে উপাচার্যের পদক্ষেপের প্রমাণ উপস্থাপন। ৮. অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো। ৯. প্রশাসনের অতীত কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিয়ে উপাচার্যের ক্ষমাপ্রার্থনা। ১০. আগের প্রশাসনের সদস্যদের নতুন প্রশাসনিক পদ না দেওয়া ও শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের একদল উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং বাসভবন ও কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের ২৭ নভেম্বর উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছিল। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২৮ নভেম্বর তাঁর কার্যালয়ের গেটে তালা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অন্য একটি পক্ষ উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেয়, যা উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।

এই পরিস্থিতিতে ২২ দফা দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্য সম্মতি দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ উদ্দীন এবং সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়াকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ায় আন্দোলন আবার শুরু হয়।

উল্লেখ্য, শুচিতা শরমিন গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ৩০ অক্টোবর সহ-উপাচার্য হিসেবে গোলাম রাব্বানি নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বারবার আন্দোলন ও পদত্যাগের দাবিতে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে, এবং এসব আন্দোলনের পেছনে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুই শিক্ষককে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ২২ দফা নিয়ে আমরা কাজ করছি, তবে একের পর এক নতুন ইস্যু তুলে আন্দোলন করাটা পড়াশোনার জন্য ক্ষতিকর। প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি এবং প্রয়োজনে আবারও বসব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেন অস্থিতিশীল না হয়, সেটাই আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরও সংবাদ