• সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শিক্ষা প্রতিদিন শিরোনাম
ঈদের ছুটিতেও বন্ধ হয়নি ঝালকাঠি জেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা: ঝালকাঠিতে অব্যাহত ছিল পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হচ্ছে ১৫০টি উপজেলায় , বরাদ্দ ২,১৫৪ কোটি টাকা তুলনামূলক সহজ হলো এনটিআরসিএর পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নলছিটিতে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির বিরুদ্ধে ওয়ার্ড সভাপতিকে মারধর, চাঁদাবাজি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ঝালকাঠিতে বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে যুবলীগ নেতা বাবু গ্রেফতার পৌরসভা খেয়াঘাটের ইজাদার শহীদ খলিফা দ্বৈত পেশায়, সদস্য রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের পেশাদার পাটনির প্রত্যয়নে ইজারাদার বড় দুঃসংবাদ বার্সেলোনা শিবিরে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু গুচ্ছের আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির সমাবেশ নিয়ে নাহিদের বার্তা যদি না সুগার ড্যাডি থাকে এত টাকা কামানো সম্ভব না, ফারিয়া শাহরিন

মিটফোর্ডে দূষিত পরিবেশ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও দালালের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল রোগী

দৈনিক শিক্ষাপ্রতিদিন,প্রতিবেদক / ৪০ দেখায় সময়:
সর্বশেষ: শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড)। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিভাগের সামনে যেতেই দেখা গেল, জমে রয়েছে ময়লা ও আবর্জনা। মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। রোগীদের এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, মশার উপদ্রবও ভোগাচ্ছে তাদের। এর সঙ্গে পুরো হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আর দালালদের দৌরাত্ম্য। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে মিটফোর্ড পরিদর্শন করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

হাসপাতালের আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, চারপাশের নালাগুলো বেশ অস্বাস্থ্যকর। গন্ধে হাসপাতালে আসা রোগীরা বিরক্ত। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গুর ভয়। রোগীর স্বজনরা বলছেন, বৃষ্টির সময় নালার বেহাল অবস্থা বেশি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া হাসপাতালের বাইরের এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেখানেও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে; যা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

শুরুতে শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০০, পরে তা ৯০০ এবং এখন ১ হাজার ২০০-তে পৌঁছেছে। যদি প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন করে অতিথি যোগ করা হয়; তাহলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০। কিন্তু সে তুলনায় হাসপাতালের পরিধি বাড়ানো যায়নি। ফলে রোগীর চাপ বেড়েছে।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সামনে দেখা গেল, পাইপ ভেঙে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ছে। এতে আশপাশের পরিবেশ আরও নোংরা হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা নাক চেপে চলাফেরা করছেন।

হাসপাতালের এমন পরিবেশের কথা স্বীকার করেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাজহারুল ইসলাম খানও। তিনি বলেন, হাসপাতালে শুরুতে শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০০, পরে তা ৯০০ এবং এখন ১ হাজার ২০০-তে পৌঁছেছে। যদি প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন করে অতিথি যোগ করা হয়; তাহলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০। কিন্তু সে তুলনায় হাসপাতালের পরিধি বাড়ানো যায়নি। ফলে রোগীর চাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর কারণে হাসপাতালের পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

রোগীরা অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নালার অবস্থা খুবই নোংরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এগুলো পাঁচবার পরিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও সামলানো যাচ্ছে না। ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগী আসার কারণে পরিবেশ ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

এসব সমস্যার সাময়িক সমাধানে নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাইরে চারটি অস্থায়ী টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। যদিও রোগীরা সেগুলো ব্যবহার করছেন না। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে রোগীর চাপ অতিরিক্ত।

দালালদের দৌরাত্ম্য
হাসপাতালে দালালদের দৌড়াত্ম্যের কথা বলতেই পরিচালক মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি বিধি-নিষেধের মধ্যে থেকেই আমাদের সব কার্যক্রম চালাতে হয়। তারপরও এখানে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা এ কাজে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাকে তিনটি মূলনীতি— শৃঙ্খলা, সততা ও জবাবদিহিতার ওপর ভিত্তি করে সাজিয়েছি। এ নীতিগুলো অনুসরণ করেই আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’

সরকারি বিধি-নিষেধের মধ্যে থেকেই আমাদের সব কার্যক্রম চালাতে হয়। তারপরও এখানে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা এ কাজে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত। -ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক, মিটফোর্ড হাসপাতাল

পরিচালক জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে ২৫০ জন দালালকে চিহ্নিত করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন তিনি। বর্তমানে হাসপাতালের সব কর্মচারীর জন্য আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; যাতে কেউ দালালি করতে না পারেন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধ্বসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে; যা রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পরিচালক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংক্রান্ত কার্যক্রম গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে; তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী প্রতিবাদ করে; ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ওপরতলায় মূলত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বসবাস করেন। তাদের প্রভাবের কারণেই প্রশাসন কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে। খুব শিগগিরই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে আশ্বাস দেন তিনি।

রোগীদের অসন্তোষ
হাসপাতালে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছিলেন সাহাদাত হোসেন (ছদ্মনাম ৬০)। হার্নিয়ায় রোগ নিয়ে আসা এ রোগী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের যথাযথ সেবা দেন না। যদি সঠিকভাবে সেবা দিতেন, তাহলে মানুষ এতটা সমস্যায় পড়তেন না। এটি সরকারি হাসপাতাল; যেখানে আমরা টাকা দিয়েই চিকিৎসা নিচ্ছি।তারপরও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছি। কেন আমি অসুস্থ অবস্থায় লাইনে দাঁড়াব?’

সাহাদাত হোসেনের ভাষ্য, ‘সরকারি হাসপাতাল হিসেবে খরচ এখানে অত্যধিক। হাসপাতাল থেকে ৩১ ধরনের ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও সব ওষুধ রোগীদের হাতে পৌঁছায় না।সরকার যে ওষুধ সরবরাহ করে, তা কম। অধিকাংশ সময়ই আমরা তা পাই না।’ তার অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে যেসব ওষুধ আসে; তার তিন ভাগের দুই ভাগই ব্যবস্থাপকদের কাছে চলে যায়। ফলে রোগীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় কিছু অব্যবস্থাপনা হতে পারে। তবে আমরা এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে মরণব্যধি ক্যান্সার চিকিৎসায় আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সিটিস্ক্যান যন্ত্রের সংখ্যা বেড়েছে। আগে এসব যন্ত্র দিনে ১২ ঘণ্টা চালু থাকত, এখন তা ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা হচ্ছে। ফলে রোগী দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারছেন। এখানে সিটি স্ক্যানের জন্য মাত্র ১ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে; যেখানে বাইরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় একই পরীক্ষায় ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে হাসপাতালের আয় প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটি মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় প্রায় ৬০০ রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, আন্দোলনের সময় আহত রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছেন; যা তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরও সংবাদ