• সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

ভাষার মাসেও অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার!

দৈনিক শিক্ষাপ্রতিদিন,প্রতিবেদক / ১ দেখায় সময়:
সর্বশেষ: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা শহীদদের স্মরণে গোটা দেশজুড়ে সাজসাজ রব পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চিত্র ভিন্ন। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের পাশে, চুরুলিয়া মঞ্চের পেছনে নিস্প্রভ হয়ে পড়ে আছে শহীদ মিনারটি। ২০১০ সালে দ্বিতীয় উপাচার্য সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে এটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এরপর ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ ব্যয়বহুল অন্যান্য স্থাপনা ও ম্যুরাল।

বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনারের চারপাশ নোংরা হয়ে আছে। পাশের গাছ থেকে ঝরে পড়া শুকনো পাতা, ধুলো আর আবর্জনায় ভরে গেছে এলাকা। লোহায় জমেছে মরিচা, মিনারের গায়ে লেগেছে শেওলার আস্তরণ। দীর্ঘদিন রং না করায় এর সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে।

শহীদ মিনারটি সুরক্ষার জন্য নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর। ফলে দর্শনার্থীরা অনায়াসে বেদীতে উঠে পড়ছেন জুতা পায়ে। পথচারী বিড়াল, কুকুরেরও অবাধ বিচরণ। আরও অবাক করা বিষয়, শহীদ মিনারের সামনেই বারবিকিউ পার্টির ইট-কয়লার অবশিষ্ট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ভাষার মাসেও শহীদ মিনারটির কোনো যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

নজরুল ভাস্কর্য, জয়বাংলা ভাস্কর্য ও চির উন্নত মম শীর স্মৃতিস্তম্ভের বাইরেও ক্যাম্পাসে একটা ভাষা শহীদ মিনার রয়েছে, তা জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী। ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ অনিক বলেন, “শহীদ মিনার কেবল ২১ ফেব্রুয়ারিতেই একদিনের জন্য ব্যবহার করা হয়, বাকি সময় অবহেলায় পড়ে থাকে। অথচ এটি আমাদের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতীক।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যতগুলো প্রকল্প চলছে, সেগুলোর মধ্যে শহীদ মিনারের কোনো বাজেট নেই।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ নানা স্থাপনা নির্মাণে মোটা অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ থাকলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ প্রান্ত বলেন, “শহীদ মিনার শুধু ফেব্রুয়ারিতে নয়, সারা বছরই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। আমাদের ইতিহাসের স্মারক যদি অবহেলিত হয়, তাহলে নতুন প্রজন্ম কীভাবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝবে?”

শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত শহীদ মিনারটির সংস্কার ও নিয়মিত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও শুদ্ধ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভাষার মাসে শহীদ মিনারের এমন দুরবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাব ও অবহেলারই বহিঃপ্রকাশ। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে অল্প সময়ের মধ্যেই যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে একে নতুন রূপ দেওয়া সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরও সংবাদ