নিয়ম বহির্ভূত ২ পরিচালকসহ ৩৩ কর্মকর্তা এবং ২ কর্মচারীর ভূতাপেক্ষিক পদোন্নতিকে এবার ফুল কমিশনের মাধ্যমে নিয়মে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ২৯ জানুয়ারি কমিশনের পূর্ণ কমিশনের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এর আগে গত ১৪ নভেম্বর কমিশন কর্তৃপক্ষের একটি বিশেষ সভা থেকে পূর্ণ কমিশনের সভা ছাড়াই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পূর্বেকার বিভিন্ন তারিখ থেকে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। তবে পূর্ণ কমিশনের সভায় এবার সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।
২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া পূর্ণ কমিশনের সভার বিবরণী থেকে জানা যায়, কমিশনের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন, পট পরিবর্তনের পর তাদের সমস্য নিরসনের জন্য ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গত ১৪ নভেম্বর কমিশনের বিশেষ সভায় ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ২ জনকে পরিচালক পদে, ২০২২ সালের ২ অক্টোবর থেকে ৭ জনকে অতিরিক্ত পরিচালক পদে, ২০২৪ সালের ৫ মে থেকে ৫ জনকে অতিরিক্ত পরিচালক পদে, ২০২৪ সালের ২৮ জুন থেকে ২ জনকে উপপরিচালক পদে, ২০২৩ সালের ২৭ জুন থেকে ৯ জনকে সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদে, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ জনকে সহকারী পরিচালক পদে, ২০২৪ সালের ২৮ জুন থেকে ৪ জনকে সহকারী পরিচালক পদে এবং ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে ২ জনকে অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জানা গেছে, এ পদোন্নতির কারণে অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন বৈষম্যের শিকার না হন সে বিষয়টিও পূর্ণ কমিশনের সভায় বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে তারা আদৌ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কিনা এবং হয়ে থাকলে তার প্রমাণক অবশ্যই থাকতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে সম্প্রতি ইউজিসির অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন কর্মকর্তা নভেম্বরের আলোচিত এই পদোন্নতির বিরোধিতা করে জ্যেষ্ঠতা অক্ষুণ্ন রাখার দাবিতে আবেদন জমা দিয়েছেন। ফুল কমিশনের সভা থেকে বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ফুল কমিশনের সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, সাম্প্রতিক কমিশনের পদোন্নতি সংক্রান্ত বাস্তবায়িত সকল কার্যক্রম বিশেষ পরিস্থিতিতেই গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে এটিকে উদাহরণ হিসেবে কোনোভাবেই বিবেচনা করা হবে না
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কমিশনের তিনজন পূর্ণকালীন সদস্য এবং পূর্ণ কমিশনের দুইজন খণ্ডকালীন সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী।
ফুল কমিশনের সভা শেষে গত ৩১ জানুয়ারি পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই পদোন্নতি সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। ফুল কমিশন অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করেই এ বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা একটা বিশেষ মুহূর্তে পদোন্নতি দিয়েছি। তবে এই কারণে কেউ যাতে বৈষম্যের স্বীকার না হয় সেটাও কমিশন বিবেচনায় রেখেছে। ডেটা উচিত, যারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে।
তিনি আরো যোগ করেন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভবিষ্যত নিয়েও আমরা ভেবেছি। কাজেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি, যেটার কারণে তারা ভবিষ্যতে কোনো বিপদের মুখোমুখি হবেন।